বাসর ঘরে স্বামী ও তার বন্ধুরা মিলে ধর্ষণ করে আধমরা অবস্থায় নদীর পাড়ে ফেলে দিয়ে গেছে আমাকে।
প্রচন্ড যন্ত্রনায় ছটফট করছে সাড়া দেহ। চোখ বন্ধ হয়ে আসছে , নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। আর মনে হয় বেশি সময় নেই আমার।
আমার বয়স যখন ১০ বছর, তখন থেকেই আমি খুব শান্ত স্বভাবের । তাই বাপ মা আদর করে নাম দিয়েছিলো “আদুরী” । একদিন আমাদের বাড়ির উঠোনের পাশে খেলা করছিলাম।
হঠাৎ করেই শুনতে পেলাম আমাদের ঘরে কারা জেনো কান্না করছে । তাই দৌড়ে ঘরের মধ্যে ঢুকি ।
আমার বাবা কান্না করছে আর পাশেই আমার মা ঘুমিয়ে রয়েছে। তখন ছোট ছিলাম তাই বুঝতে পারিনি এইটা মায়ের শেষ ঘুম ছিলো। আর নাকি উঠবে না আমার মা ।
এইটা ভেবেই কান্না করছিলাম , কিন্তু মৃত্যু কাকে বলে সেটা জানতাম না। সেদিনের পর মা আর ঘুম থেকে উঠে নি ।
তার পর আমার বাবা আমার সুখের কথা চিন্তা করে আরেক টা বিয়ে করে । যাক নতুন আরেকটি মা পেলাম, আগের মা তো পঁচা , সে শুধু ঘুমিয়ে থাকে উঠে না ।
আর আমার নতুন মা অনেক ভালো , আমার জন্য নতুন নতুন কাপড় নিয়ে আসে খেলনা নিয়ে আসে। কিন্তু এই আনন্দ টা বেশিদিন ছিলো না।
আমার আগের মা ভালো ছিলো কোনো দিন আমাকে মারেনি। কিন্তু নতুন মা আমাকে সবসময় মারতো, ভারি ভারি কাজ করাইতো।
একদিন শুনি পূর্ব পাড়ায় কে জেনো গাছের সাথে ফাঁস দিয়েছে।
ফাঁস কাকে বলে জানতাম না, সেদিন বুঝেছিলাম ফাঁস মানে কি। দৌড়ে সেখানে গিয়ে দেখি আমার বাপ গাছের সাথে ঝুলে আছে,যেমন টা আমরা দোলনায় ঝুলি ঠিক তেমনি ভাবে। আমারও খুব সখ হলো দোলনায় দুলতে।
কিন্তু কেউ আমার কথা শুনে নি । সেদিন আমার বাবাও ঘুমিয়ে পড়ে আমার মায়ের মত।
লোকজন বলে আমার নতুন মা নাকি রফিকের সাথে মিলে আমার বাবাকে মেরে গাছের সাথে ঝুলিয়ে দিয়েছে।
রফিক তো আমার কাকার নাম , আমার আপন কাকা । তার সাথে নাকি আমার নতুন মায়ের গোপন সম্পর্ক ছিল। তাই আবার বাবা হাতে নাতে ধরে ফেলায় ওরা দুজন মিলে আমার বাবাকে মেরে দেয়। কিভাবে আমার কাকা তার নিজের ভাইকে মারলো?
সেদিন পুলিশ এসেছিলো আমাদের গ্রামে। আগে কখনো পুলিশ দেখেনি । তাই দৌড়ে আসলাম তাদের দেখতে । অনেক লম্বা লম্বা মানুষ, তাদের সাথে অনেক বড় বড় বন্দুক ছিল। আমার নতুন মা আর কাকা কে বেঁধে নিয়ে যায় তারা । সাথে আমার বাবার লাশটা কেউ।
সেদিন খুব একা লাগছিলো। বাড়িতে তো কেউ নেই একদম ফাঁকা।
অনেক কান্না করেছিলাম, পাশের বাড়ির খালা এসে খেতে দিতে দিতে বলে _ মারে দুনিয়াটা বড়ই পাষান। তোর সংগ্রাম করে বাঁচতে হবে।
তখন সংগ্রাম মানে কি বুঝতাম না। তবুও মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়েছিলাম।
পরদিন আমার মামা এসে আমাকে নিয়ে যায় তাদের বাড়িতে । আমার বাপের ভিটা নাকি আমার নামে ছিলো হয়তো তার লোভেই এই অসহায় মেয়েকে তাদের বাড়িতে জায়গা দেয় ।
লোকের কাছে মামার বাড়ি মানে রসের হাঁড়ি। কিন্তু আমার কাছে বিষয়টি উল্টো। কারন সেখানে দিন রাত চাকরের মত খাটতে হতো ।
একদিন কাজ কম করলে সেই দিনের ভাত বন্ধ। কতরাত যে না খেয়ে ঘুমিয়েছি তার হিসেব নেই।
একদিন রাতে ঘুমাচ্ছিলাম , হঠাৎ কারো হাতের স্পর্শে ঘুম ভেঙ্গে যায়। উঠে দেখি আমার ছোট মামা আমার দিকে কেমন করে তাকিয়ে আছে। তখন বয়স আমার ১৩ পারিয়েছে।
আমি উঠে মামা কে জিজ্ঞেস করি , কোনো কাজ করতে হবে মামা?
মামা তখন আমার দিকে কেমন বিরক্তিকর হাসি হেসে বলে _ তোকে কিছু করতে হবে না ,শুধু শুয়ে থাক । আমি মামার কথার কিছুই বুঝতে পারলাম না । কিন্তু পরে বুঝলাম যখন সে আমাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে লাগলো ।
আমি কান্না করতেই সে মুখ চেপে ধরে। অনেক কাকুতি মিনতি করার পরেও শেষ রক্ষা হয়নি। সেদিন বুঝেছিলাম ধর্ষণ কাকে বলে।
অনেক রক্ত ক্ষরন হচ্ছিল, আমি অনেক কান্না করি । যাওয়ার সময় মামা বলে যায় কাউকে যদি এই ব্যাপারে বলি তাহলে সে আমাকে মেরে ফেলবে। তাই ভয়ে কাউকে কিছু বলিনি, আর বলেও লাভ নেই কেউ বিশ্বাস করবে না আমার কথা ।
ঠিক ১ বছর পর যখন আমার বয়স ১৪ হয় তখন আমাদের বাড়ির সব কিছু আমার মামারা নিয়ে নেয়।
আমি কিছু বলতে পারলাম না, বাপ মায়ের শেষ স্মৃতি টাও শেষ হয়ে গেলো।
আমার মামী একদিন মামাকে ডাক দিয়ে বলে _ এখন এই বুঝা আমাদের ঘাড় থেকে নামাও। আমার এক পরিচিত ঘটক আছে তাকে বলে ওর বিয়ে দিয়ে দেই। গরীব ছেলে দেখে বিয়ে দিবো যেনো যৌতুক না দিতে হয় ।
পরদিন আমাকে বিয়ে দিয়ে দেয় এক অপরিচিত লোকের সাথে। কেউ তাকে চিনে না, সে নাকি অনেক দূরের এক গ্রামে থাকে । তাই দেখতে এসেই বিয়ে হয়ে যায় আমার।
আমারও অনেক ইচ্ছে ছিলো, আমার বিয়ে হবে অনেক আনন্দ করবো। কিন্তু আদুরী শুধু নামটাই থেকে গেলো, আদর তো পেলাম না।
তারপর আমাকে একটি বাড়িতে নিয়ে যায়। বাড়িতে কেউ নেই কেমন অদ্ভুত বাড়ি। এটাই কি আমার শশুর বাড়ী?
বাসর ঘরে বসে ছিলাম স্বামীর আসার অপেক্ষায়। কিন্তু আমার স্বামী এবং তার বন্ধুরা মিলে আমাকে ধর্ষণ করে। তাদের কাছে প্রান ভিক্ষা চেয়েও পেলাম না। আমাকে ধর্ষণ করে নদীর পাড়ে ফেলে রেখে গেছে। আমার নিথর দেহ পড়ে আছে মাটিতে।
হঠাৎ আকাশ মেঘে ঢেকে যায় , নিমিষেই একটা বিকট শব্দে আওয়াজ করে বাজ পড়ে অদৃশ্য হয়ে যায় আদুরী ।
শুধু এতটুকুই লেখা ছিলো বইটাতে । গল্পটি পরে চোখে পানি চলে এলো নিঝুমের । শেষ টুকু পড়ার আগ্রহ হয়ে উঠলো। প্রায়ই তাদের পুরোনো লাইব্রেরিতে গিয়ে গল্প পরে সময় পার করে নিঝুম। সে এইবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে সবে মাত্র কলেজে উঠেছে।
সে তার বাবার কাছে সেই বইটি নিয়ে যায় এবং বলে বাবা এই বইটার শেষের পাতা গুলো কি হয়েছে?
নিঝুমের বাবা সোহেল চৌধুরী নিঝুমের হাতে বইটি দেখতে পেয়ে থাবা মেরে কেড়ে নেয় । আর বলেন _ এই বইটা তুমি কোথায় পেলে?
নিঝুম _ আমাদের লাইব্রেরিতেই ছিলো।
সোহেল চৌধুরী _ তুমি আর এই বইটি হাতে নিবে না। আর লাইব্রেরিতে আমার অনুমতি ছাড়া ঢুকবেনা ।
নিঝুম কিছু না বলে সেখান থেকে চলে যায়। নিঝুম মনে মনে ভাবতে থাকে , বেচারি আদুরীর শেষে কি হয়েছিল এইটা জানতে পারলাম না।
সাড়া দিন সে সেই গল্পের আদুরীর কথা ভাবছিলো। রাতেও সেই কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরে ।
রাতে ঠান্ডা লাগাতে ঘুম থেকে জেগে উঠে নিঝুম। দেখে জানালা দিয়ে বাতাস ঢুকছে তাই শীত করছে।
নিঝুম উঠে জানালা বন্ধ করতে যায় । সে জানালার পাশে যেতেই দেখে একটা মেয়ে বধু সেজে তাদের বাড়ির উঠানে দাঁড়িয়ে আছে।
নিঝুম খানিকটা ঘাবরে যায়।
নিঝুম বলে উঠে কে তুমি? এখানে এত রাতে কী করছো। নিঝুমের কথা শেষ হতেই সেই বধু বেসে মেয়ে টা নিঝুমের দিকে তাকায় ।
নিঝুম তার মুখের দিকে তাকাতেই ভয়ে তার শরীর কাঁপতে শুরু করে। দেখে তার চেহারায় কেমন কালো দাগ পরে আছে আর চোখে রক্ত বের হচ্ছে।
_নিঝুম আমাকে সাহায্য করো___
[…] […]